অর্থের সময়মূল্যের গুরুত্ব

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - অর্থের সময়মূল্য | NCTB BOOK
2.5k
Summary

ব্যবসায়ের সিদ্ধান্তে অর্থের আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এই প্রবাহের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ জরুরি।

  • সুযোগ ব্যয়: একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে অন্য প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ হারাতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, জমির মূল্য ১০ বছরে দ্বিগুণ হয় এবং সোনালী ব্যাংকের সুদের হার ৮%। এখানে জমি ক্রয়ের সুযোগ ব্যয় ৮%। সুতরাং, ৭২ রুল ব্যবহার করে দেখা যায় যে জমি ক্রয় না করে ব্যাংকে টাকা রাখা যুক্তিসংগত।
  • প্রকল্প মূল্যায়ন: দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোর বর্তমান ব্যয় ও ভবিষ্যৎ আয়ের তুলনা করতে হয়। ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয়কে বর্তমান মূল্যে আনতে হয় প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য।
  • ঋণগ্রহণ সিদ্ধান্ত: ঋণ নেওয়ার আগে কিস্তি পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা জরুরি। বিভিন্ন ঋণ মেয়াদের জন্য কিস্তির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। ঋণের পরিশোধ নিশ্চিত না হলে ব্যবসা দেউলিয়া হতে পারে।

ব্যবসায়ের প্রতিটি সিদ্ধান্তের সাথেই অর্থের আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ জড়িত থাকে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহের মেয়াদভিত্তিক বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ফলে অর্থের সময়মূল্যের গুরুত্ব বিবেচনায় বলা যায়-

ক) সুযোগ ব্যয় : কোনো একটি প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করলে অন্য কোনো প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগকে ত্যাগ করতে হয়। যাকে অর্থায়নে বিনিয়োগের সুযোগ ব্যয় বলা হয়। সুতরাং অর্থের সময়মূল্যের সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে এই সুযোগ ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ: তোমার এলাকায় জমির মূল্য ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়। পক্ষান্তরে সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবে সুদের হার ধরা যাক শতকরা ৮ ভাগ। জমি কিনলে সোনালী ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে না, তাই জমি ক্রয়ের সুযোগ ব্যয় এ ক্ষেত্রে ৮%। এ ক্ষেত্রে আমরা এই অধ্যায়ের সূত্র নং ১ ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি যে জমি কেনা উচিত, নাকি সোনালী ব্যাংকে টাকা রাখা উচিত। এ ব্যাপারে একটি সহজ এবং মোটামুটি সঠিক পদ্ধতি রুল ৭২' নামে পরিচিত। টাকা দ্বিগুণ হলে ৭২-কে মেয়াদ দিয়ে ভাগ করলে সুদের হার পাওয়া যায়, আবার ৭২-কে সুদের হার দিয়ে ভাগ করলে মেয়াদ পাওয়া যায়। জমির মূল্য যেহেতু ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়। সুতরাং সুদের হার (৭২/১০) বা ৭.২% সুতরাং জমি ক্রয় না করে সোনালী ব্যাংকে টাকা রাখা যুক্তিসংগত।

খ) প্রকল্প মূল্যায়ন : দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প মূল্যায়নে প্রকল্পের বর্তমান ব্যয়ের সাথে ভবিষ্যৎ আয়ের মধ্যে তুলনা করতে হয়। এই অধ্যায়ে আমরা জেনেছি, টাকার বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ মূল্য সমান নয়। সুতরাং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয়কে বর্তমান মূল্যে না এনে আমরা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প মূল্যায়ন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। পরবর্তী অধ্যায়ে ক্যাপিটাল বাজেটিং করার সময় আমরা এই ধারণার প্রয়োগ দেখব।

গ) ঋণগ্রহণ সিদ্ধান্ত : ব্যাংক বা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের আগে কিস্তি পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা করতে হয়। ঋণ পরিশোধের বিভিন্ন মেয়াদের ভিত্তিতে কিস্তির পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন: ৫ বছর মেয়াদি অথবা ৮ বছর মেয়াদি ঋণের কিস্তি বিভিন্ন হবে, আবার এই বিভিন্ন মেয়াদি হতে পারে যেমন: বার্ষিক, মাসিক ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রেও কিস্তির পরিমাণ বিভিন্ন হবে। অর্থের সময়মূল্য নির্ণয় করে আমরা বিভিন্ন পরিমাণ ঋণের বিভিন্ন মেয়াদি কিস্তি বের করতে পারি এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে কী ধরনের মেয়াদে কীভাবে পরিশোধ্য কিস্তিতে কত টাকা ঋণ নেয়া কারবারটির জন্য উপযুক্ত হবে। এ ধরনের পরিকল্পনার অভাবে অনেক কারবার দেউলিয়া হয়ে যায়, কারণ ঋণ গ্রহণের আগে পরিশোধ ক্ষমতা যাচাই করে তবে ঋণ নিতে হয়। মনে রাখতে হবে ঋণের টাকা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক, পরিশোধে ব্যর্থ হলে কারবারটি দেউলিয়া হয়ে যায়।

Content updated By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...